ConflictCrimeLaw EnforcerWorld

‘ঘুষ না দেওয়ায়’ ধর্ষিতাকে যৌনকর্মী সাজিয়ে চালানের অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে-

 Ns News Online DeskNs News Online Desk: বাংলাদেশর  রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার ওসি ওয়াজেদ আলী মিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক নারী। গণধর্ষণের শিকার হয়ে থানায় মামলা করতে গেলেও ‘ঘুষের টাকা’ দিতে না পারায় উল্টো তাকেই যৌনকর্মী সাজিয়ে আদালতে চালান করা হয়— এমন অভিযোগ এনে তিনি মামলাটি কতরেছেন বলে জানা যায়। যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা ওই নারী বৃহস্পতিবার ঢাকার ৩ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করেন। পরে আদালতের বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।

ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাহমুদা বেগম সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। দুই সন্তানের মা ওই নারীর (২৭) মামলার নথি অনুযায়ী আসামিরা হলেন— যাত্রাবাড়ী থানার ওসি ওয়াজেদ আলী মিয়া, এসআই আ স ম মাহমুদুল হাসান ও মোছা. লাইজু, শফিকুল ইসলাম রনি, মো. সাগর, মো. শামীম, মো. আলাউদ্দিন দেলোয়ার হোসেন, মো. হানিফ, মো. স্বপন, বিলকিস আক্তার শিলা ও ফারজানা আক্তার শশী।

মামলার আরজিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭ ধারায় অপহরণ ও ৯(৩) ধারায় দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। তবে ওসি ও দুই এসআইর বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ নেই। তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করার জন্য ঘুষ চাওয়া ও ঘুষ না পেয়ে বাদীকে যৌনকর্মী সাজিয়ে আদালতে চালান দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।

মামলার এজাহাজরে বলা হয়, স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়া দুই সন্তানের এই মা অভাব-অনটনের কারণে কাজের খোঁজে ছিলেন। তার পূর্বপরিচিত শফিকুল ইসলাম রনি তাকে অনলাইনে থ্রিপিস ও শাড়ি বিক্রির একটি প্রতিষ্ঠানে কমিশনে চাকরি দেওয়ার কথা বলেন। সেই অনুযায়ী গত ১২ মার্চ করাতিটোলায় ফারজানা আক্তার শশী ও বিলকিস আক্তারের ফ্ল্যাটে তাকে ডেকে নেয় রনি। এরপর তাদের সহযোগিতায় বাড়ির মালিকের ছেলে স্বপন তাকে ধর্ষণ করে। তখন তিনি চিৎকার শুরু করলে আসামি শশী ও শিলা তার গলায় বঁটি ঠেকিয়ে মেরে ফেলার ও ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এরপর জীবন, বিপ্লব, হানিফ, সাগর ও আলাউদ্দিনসহ আরও ১০-১২ জন ইয়াবা সেবন করে তাকে ধর্ষণ করে। সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে সুযোগ বুঝে সেখান থেকে পালিয়ে যান। সেখান থেকে বেরোনোর পর তার চিৎকারে নাজমুল হোসেন নামে একজন এগিয়ে আসেন। সব কথা শুনে তিনি তাকে রেজাউল করিম নামে এক মানবাধিকারকর্মীর কাছে নিয়ে যান। তার মাধ্যমে তিনি যাত্রাবাড়ী থানায় যান। সেখানে ওসিকে না পেয়ে এসআই প্রদীপ কুমার ও আয়ান মাহমুদকে ঘটনাটি জানান। তারা এসআই লাইজুকে বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, এসআই লাইজু ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্ত শশী ও শিলাকে ১৮টি ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে আনেন। এরপর লাইজু ভুক্তভোগী নারীকে বলেন, ওসি ওয়াজেদ, এসআই প্রদীপ কুমার ও আয়ান মাহমুদুকে এক লাখ টাকা ঘুষ দিলে ধর্ষণের মামলা হবে। না দিলে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হবে। পরে গত ১৮ মার্চ ঘুষের টাকা না দিতে পারায় যৌনকর্মী সাজিয়ে শিলা, শশীসহ তাকেও আদালতে পাঠান ওসি ওয়াজেদ, এসআই মাহমুদুল হাসান ও লাইজু।

ভুক্তভোগী নারীর করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামি শশী ও শিলা ইয়াবাসহ গ্রেফতার হলেও এ নিয়ে কোনো মামলা হয়নি। উল্টো বাদীকেই যৌনকর্মী সাজিয়ে আদালতে পাঠানো হয় এবং তাতে ধর্ষণের ঘটনা চাপা পড়ে যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি  সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ১৩ মার্চ একটি আবাসিক হোটেল থেকে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। জামিনে বেরিয়ে এসে তারা আবার একই কাজ শুরু করে। এতে বাধা দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তারা আদালতে এমন অভিযোগ করেছে। ওই নারীর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

Related Articles

Back to top button